শপিং সেরে বাসায় ফিরলো মাহমুদ।একগাদা শপিং করেছে আজ । নিজের জন্য পাঞ্জাবী, জুতা,শার্ট আর বাসার সবার জন্য আরো তিন ব্যাগ জিনিস।
অনেক রাত হয়ে গেছে।ড্রেস চেইঞ্জ করে নিজের রুমে এসে ক্রেডিট কার্ডে করা কেনাকাটাগুলোর স্লিপ আলাদা করছিল। হঠাত তার নজর যায় স্লিপের তারিখের উপর। গত বছর আজকের এ দিনে শবনমের সাথে তার পরিচয়।চিন্তা করতেই যেন কল্পনার জগতে চলে যায় মাহমুদ।
………… ব্যাপারটা নিছক ফান ছিলো তার কাছে।মোবাইল ফোনে পরিচয়, এ আর আহামরি কি !! এ তো অহ রহ ই হয়/ ব্যাপারটা তেমন গুরুত্ব দেয়নি সে। খুব মনে করার চেষ্টা করল সে। কিছুতেই মনে করতে পারছেনা কিভাবে কেটেছে পরিচয়ের পরের কয়েক টা দিন। নাহ! পারলো না। সে যে কতটা হাল্কাভাবে নিয়েছলো তা বুঝতে পারছে সে।কিন্তু এটা ঠিক তার বাচনভঙ্গিটা ভালো লেগেছিলো মাহমুদের। না না, এখানে তো প্রেমের চিন্তা নয়। কারণ মাহমুদ জানতো মোবাইল প্রেম সম্পর্কে। তার ঘনিষ্ট আরাফাত যদিও অনেকটা হ্যাপি তার প্রেম নিয়ে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সে দেখেছে এসব অকালপক্ক আচরণের করুণ পরিণতি। এসব ভাবতে ভাবতেই মাহমুদের মনে হয়ে যায়, গত রোজার ঈদের পর তাদের মধ্যে হঠাত করে যোগাযোগ বেড়ে যায়।কিছুই না শুধু হাই হ্যালো টাইপ।তেম ন সিরিয়াস কোন আলোচনা এড়িয়ে চলতো মাহমুদ। যদিও শবনম অনেকবার চেয়েছিল কিন্তু মাহমুদ রাজি হয়নি সে ধরনের বিষয়ে। এসব চলতে চলতেই একদিন ছবি দেখে একজন আরেকজনের। একজন বাঙ্গালী মেয়ের মত শবনম নিশ্চুপ থাকালেও মাহমুদের মনে খটকা লেগে যায়। ছবির মধ্যে সে কিছু একটা খুঁজে বেড়ায়। কেন যেন তাকে ভালো লাগে। না না এ হতে পারেনা। হালের মডার্ণ মেয়েতে ভর্তি, এমন ভার্সিটির ছাত্র হলেও কেন জানি তার এ সাধারণ মেয়েটাকে ভালো লাগে। মনের অজান্তেই মাহমুদ দেখা করতে চায়।যথারীতি শবনমের না, এবং না পরে হ্যাঁ তে রুপান্তর হয়। পরবর্তীতে তা দুজনার ভালোলাগায় রূপ নেয়।
লেকের ধারে বসে গল্প করা, ক্লাসের পরে ঘুরতে যাওয়া এবং বাসায় এটা নিয়ে ধরা খাওয়া। ভর দুপুরে বের হওয়া, নিজের জন্মদিনের দিনটা অসম্ভব ঘটা করে উদযাপন, সব মনে পড়ে যাচ্ছে মাহমুদের।কি আনন্দেই তো কাটতো সেই সব রঙ্গিন দিনগুলো। একবার তো শবনমের গাড়ি নিজে ড্রাইভ করে বের করতে গিয়ে সিকিউরিটি চেকিং এ আটকে গিয়েছিল মাহমুদ,নিজের গাড়ি চালালেও এক্সিও কখনো চালায়নি সে। অনেকটা পাগলামো করারই খেসারত বলতে হয়।তার সবচেয়ে মনে পড়ে শবনমের সব কিছু মনে না থাকলেও মাহমুদের জন্ম সাল ঠিকই খেয়াল রেখেছিল আর তা মাহমুদ বুঝতে করেছিল তার জন্মদিনে শবনমের দেয়া চকলেটের পরিমাণ দেখে।
ভালোবাসায় সুখ দুঃখ হাসি কান্না থাকাটা স্বাভাবিক, বরং বলা উচিত তা অতি প্রয়োজনীয় অংশ। এ ভালোবাসাকে পবিত্র ভেবেই চলছিল তাদের ভালোবাসা । কিন্তু শবনমের কিছু অবাস্তব কথায় সন্দেহ হয় মাহমুদের। সে ক্রস চেক করে বুঝে ফেলে শবনম কিছু লুকাচ্ছে। যতবারই শবনম একাজ করেছে, ততবারই মাহমুদের তাদের ভালোবাসার স্বার্থে বিষয়গুলো সমাধান করার চেষ্টা করেছে।
অমিত-লাবন্য কে যারা নিজেদের ভালোবাসার আইডল মানতো, তাদের ভালোবাসার পরিণতি যে সেই অমিত-লাবণ্যের মত হবে সেটা কে ভেবেছিল। নাবিলের মনে শবনমের জন্য ভালোবাসার ঘাটতি ছিল না। সবকিছু উজাড় করে,বাসার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যে মানুষটাকে ভালোবাসতো, বলা চলে তার কাছ থেকে বাধ্য হয়ে দূরে সরে গেছে মাহমুদ।
মাহমুদ, বাবা মাহমুদ, ঘুমালি না ? হঠাৎ মা’র ডাকে যেন সম্বিৎ ফিরে পেল মাহমুদ, রাত চারটা বাজে!! সকালে অফিস,সাথে আছে প্রেজেন্টেশন। সব রেডি থাকলেও তার ঘুম দরকার।লাইট অফ করে শুতে গেল মাহমুদ।
শবনমের সাথে হয়তো আজ মাহমুদ নেই, কিন্তু মাহমুদের মনে শবনম আছে সেই প্রতিমারূপে । হয়তো চিন্তা করলে সিংহভাগ দায়ভার শবনমের, কিন্তু তাতে কি !শবনম না থাকলেও শবনমের সব স্মৃতি মাহমুদ স্বযত্নে রেখে দিয়েছে। হয়তো আজ শবনমের কথা ভাবছে মাহমুদ, একদিন হয়তো অন্য কাউকে বিয়েও করবে, সুখেও দিন কাটাবে, কিন্তু কোন দিন কি মাহমুদ কি অস্বীকার করতে পারবে শবনমের কথা, তার সেই রূপকথার রাজকন্যার কথা ? জীবনের স্রোত বয়ে চলে যাবে সামনে ধাবিত হয়ে, কিন্তু রেখে যাবে এমন সব ইতিহাস যা পারিপার্শ্বিক কারণে দমাতে হলেও বাস্তবে দমানো সম্ভব নয়।
মূল কথা – বাস্তবে যাই হোক না কেন, ভালোবাসা সর্বদাই পবিত্র এক বন্ধন। কাউকে মন থেকে ভালোবাসলে তাকে ভূলে যাওয়া এত সোজা নয়।তাই মন দেয়ার পূর্বে শতবার চিন্তা করা বাঞ্চনীয়।
আর এখন ভালোবাসা বলতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা দেখা যায় তা ভন্ডামীর নামান্তর ও অহেতুক সময়ক্ষেপণ।এক কথায় এসব ভালোবাসা নিজেদের মানসিক প্রয়োজনীয়তার চেয়ে শারীরিক প্রয়োজনীয়তার দিকে বেশী পারদর্শী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন