শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০১০

চলমান সেলিব্রিটি ক্যাচাল ও সাম্প্রতিক সম্পর্ক সমূহের ব্যবচ্ছেদ

বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন ধরে লিখবো ভাবছিলাম , কিন্তু লেখার সময় হয়ে উঠেনি। এখন টক অফ দ্য সিটি হিসেবে পরিণত হওয়া রাজিব-প্রভার প্রেমের অদেখা দিকগুলো এবং Itoro 'Ausafrik' Okon এর লেখা ফেসবুকের একটি বহুল প্রচারিত গল্প থেকে মনে করলাম লেখাটি লিখে ফেলা উচিত।

সতর্কীকরণ অতি প্রাক্টিকালরা এ লেখা পড়বেন না।

প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের যোগাযোগ এখন হাতের মুঠোয়। চাইলেই আপনি পারবেন একে যেকোনভাবে ব্যবহার করতে। ফেসবুক প্রেম কিংবা মিসকল প্রেম এখন নিত্য-দিনকার ঘটনা। কিন্তু এ প্রযুক্তি আমাদের যান্ত্রিক করে দিচ্ছে তা আমাদের আচরণ ই বলে দেয়। আজকাল কার সম্প র্কগুলো হয়ে গেছে add and shift delete এর মত। ভালো লাগল , প্রেম করেন আর না লাগল ছেড়ে দেন। কেউ যেন আর ঝামেলা বাড়াতে চায় না। অনেকটা হলে হল না হলে নাই ভাব। কিন্তু এত কিছুর মাঝেও আমাদের কিছু আচরণ যে কিছু স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করতে পারে, সেটাই আমার আজকের আলোচনার বিষয়।

আমরা নিজেদের ভালো লাগা থেকে হোক আর ভালোবাসা থেকে হোক, নিজের অনেকটা অজান্তেই প্রেমে পড়ছি । প্রেমের মধ্যে প্রগাঢ়তা, নিষ্ঠা, সম্মান, বিশ্বাস সবই থাকতে হয়।

প্রেমে চারটি পেয়েছি। কি , কত , কেন , কার জন্য

আসুন আগে জানি কি করছেন । আচ্ছা আপনি একটিবার ভাবুন তো আপনি কি করছেন ? আপনি কি আসলে ভালবাসেন নাকি এ নিছক একটি টাইম পাস অথবা শর্ট-টার্ম মাস্তি। যদি আপনি সে ধরনের হন তাহলে একটু দাঁড়ান। আপনি এসব কি করছেন ? আপনি কিভাবে জানেন যে আপনার ঐ মানুষটাও আপনার সাথে ফান করছে, এমনও হতে পারে ঐ মানুষ টা আপনার প্রতি শতভাগ সৎ।তাহলে আপনি কি ভাবছেন, ফান করলে কি আসে যায়? করতে পারেন, তবে এটুকু খেয়াল রাখবেন,আপনি যা করবেন, তার ফল আপনাকে পেতেই হবে। আপনি কাউকে একটু উপকার করেন, এর প্রতিদান আপনি পাবেন। আর কাউকে কষ্ট দিলে আপনার জীবনে এমন একদিন আসবে যেদিন আরেকজন আপনাকে উপর্যুপরি কষ্ট দিবে কিন্তু আপনি কিছুই করতে পারবেন না।

আসুন এবার কত এবং কেন এ। আচ্ছা বলুনতো প্রেমের গভীরতা আসলে কতটুকু পর্যন্ত ? নানা মুনির নানা মত এর দেশে আমি উত্তর পাব অনেক গুলো। কেউ বলবেন চুমু খাওয়া, কেউ বলবেন তার চেয়েও বেশি, আবার কেউবা সরাসরি সেক্স পর্যন্ত সমর্থন করবেন। নিরপেক্ষভাবে বলতে গেলে আসলে মোটা দাগে এটার উত্তর দেয়া অসম্ভব।আমার মত হচ্ছে কতটুকু করছেন যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশী জরুরী হল কেন করছেন ? Everything is fair in love and war এ মত টা আমি মানি। তবে তা শুধুমাত্র নিখুঁত ভালোবাসার ক্ষেত্রে এবং সেক্স ব্যতিত।সহজ প্রশ্ন কেমনে বুঝবেন যে এটা কি ভালোবাসা নাকি ফান ? উত্তর হল আপনি নিজেই ভাবুন তো কোথায় লিখা আছে আজকে পরিচয় হলে কাল কিস, পরশু বুকে হাত দেয়া আর দশ দিনের মাথায় সেক্স ? এটা কিন্তু এখন অহরহ হচ্ছে। কিন্তু কেন ? এটা তো কোন সুস্থ সম্পর্ক নয়। আমি মানলাম যে গভীরতা ভালোবাসার একটু অংশ, কিন্তু এটাও তো ঠিক যে এই গভীরতা কখনোই বাধ্যতামূলক না। যে সম্পর্কে মানসিক এর চেয়ে শারীরিক চাহিদাটাই বেশি ফুটে উঠে সেটা কখনোই প্রকৃ্ত ভালোবাসা নয়।আমারা কিন্তু নিজেদের অজান্তেই ভালোবাসার আসল দিক মন থেকে সরিয়ে শরীরে চলে আসছি।সেক্স না করলে ভালোবাসা হয় না এটা কিন্তু না। কিন্তু আমরাই এটাকে মূখ্য করে ফেলছি । আর এর ভুক্তভোগী হয় তারা যারা আরেকজনের হাতের খেলনা তথা ফানের পাত্রে পরিণত হয়। তাই ভালোবাসায় যাই করেন না কেন , একটু ভেবে চিন্তে এগোলে ক্ষতি কি ? আপনি তো আরেকজনকে চেনার একটু সুযোগ ও পেলেন। তাহলে এ সুযোগ হাত ছাড়া কেন করবেন ? আর এতো সেক্স করার ইচ্ছা থাকলে বিকল্প পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করলেই তো হয়

কিন্তু এর সাথে আজকাল যোগ হয়েছে বৈষয়িক চিন্তাভাবনা।আমি যে একটা মানুষকে ভালোবাসি , সেটা আমার সার্কেল কে না ঘটা করে জানালে যেন ষোল কলা পূর্ণ হয় না। যতটুকু না ভালোবাসব, তার চেয়ে বেশী শো-অফ করবো, এটাই যেন থাকে মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এটা করতে গিয়ে আমরা ভালোবাসার মূল ভিত্তি সমূহ কে যেন ভুলে যেতে বসেছি।

আসি এবার কার জন্য বা শো-অফ বিষয়ে। গভীরতা ভালোবাসার ই একটি অংশ। ভালোবাসার প্রগাঢ়তাই দুটি প্রাণকে মিলে-মিশে একাকার করে দেয়। কিন্তু শো-অফের মানে কি ? শো-অফের মানে কি আপনি আপনার মনের মানুষে বাজেভাবে জড়িয়ে ধরে আছেন সেটা সবাইকে দেখাবেন, নাকি এর মানে পাবলিক প্লেসে যেখানে সেখানে আপনার মনের মানুষের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়া ? নাকি শো-অফ মানে স্টার সিনেপ্লেক্স এর মেক-আউট এর আগে গিয়ে থামা নাকি তার সাথে আপনার অন্তরংগ মুহূর্ত ভিডিও করে ফেলা এবং তা শেয়ার করা ?

এটা পড়েই অনেকেই নাক সিঁটকে ফেলবেন । কেউ বলবেন এটা কোন ব্যাপার নাকি ? আবার কেউ বলবেন এটা ভাল মানুষের কাজটা না। আর আমার উত্তর হল যা কিছুই হোক শো-অফ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি আরেকজনকে ভালোবাসেন ,সেটা সবাইকে জানান ঠিক আছে, কিন্তু কিভাবে বাসেন সেটা আরেকজনকে জানানোর কি দরকার।কি দরকার পড়ছে কার কোনটা কিরকম সেটা আরেকজনকে দেখিয়ে আর বলে বেড়ানো ? এসব হচ্ছে বিকৃ্ত রুচির পরিচয়।যারা পর্ণ দেখেন তারা এটা মানবেন যে উপমহাদেশীয় পর্ণগুলোতে এখন পরিবর্তন ঘটেছে। যেমন, উদাহরণ দিয়ে বলি এই দশকের শুরুতে শাহীনের কেলেংকারীর কথা। সেগুলো ছিল সব হিডেন ক্যাম। ট্রান্সফর্মেশন টাঞ্জিশন পিরিয়ড মানে এ দশকের মাঝামাঝির পর্ণগুলোতে দেখা যেত যে মেয়েটা একটু লজ্জা পাচ্ছে,অনেক ক্ষেত্রে ভিডিও করাকে সায় দিচ্ছে আবার অনেকগুলাতে না। আর বর্তমানের ধারক-বাহক টিনা-ফাহাদ , শ্যামল-যুথি , রাজিব- প্রভা এরা কী ? এরা হল মানসিক বিকৃ্তি সম্পন্ন যা কিনা নিজেদের সেক্স লাইফ আরো হাজারোজনকে দেখায়। এরা কখনোই সুস্থ মস্তিস্কের হতে পারে না।তাই এ ধরনের শো-অফ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।

কয়জন আজ বুক ছুয়ে বলতে পারবেন যে তিনি আজ ভাল ভাবে জানেন তার মনের মানুষটাকে, কয়জন বলতে পারবেন তিনি একাগ্রচিত্তে আজ তাকে বুঝার চেষ্টা করেছেন কিংবা তাকে নিয়ে বসে জিজ্ঞেস করেছেন যে তার কোন অভিযোগ আছে কিনা ? নাহ ! এখন আর কারো এসব জানার সময় নেই। যে যার যার মত চলছেন। একটু থামুন গতিময় এ জীবনটায়। যান আপনার মনের মানুষের কাছে।নিজেকে নয়, আজ নিজেদের একটু সময় দিন। আজ বৈষয়িক সবকিছু দূরে ঠেলে কিছুটা সময় দিন তাকে। নিজেদের বুঝতে চেষ্টা করুন। তারপর দেখুন না, এ জীবন আর একঘেয়ে মনে হবে। নিজেদের নিয়ে আর বোর হবেন না। সবাই জীবন রঙ্গীন ও সুখি হোক এই কামনা করি।

অনেকেই লেখক কে অতিমাত্রায় আঁতেল ভাবতে পারেন। এ লেখাটি যথাযম্ভব নিরপেক্ষ দৃষ্টি-ভঙ্গি ও অভিজ্ঞতা থেকে লিখা হয়েছে। নিজের জীবনে লেখক এর কতটুকু প্রয়োগ করেছেন সে ব্যাপারে লেখক নীরব। ধন্যবাদ।


একইসাথে প্রকাশিত - সামু , লেখকের ফেসবুক ও ব্লগ

২টি মন্তব্য:

  1. দোস্ত, তুমি প্রেমগুরু থেকে কঠিন প্রেম সমালোচকে কবে জাত পরিবর্তন করলা ???

    উত্তরমুছুন
  2. জিকো ঃ নিজের জীবনে লেখক এর কতটুকু প্রয়োগ করেছেন সে ব্যাপারে লেখক নীরব। ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন